বৃহস্পতিবার, ০৫ জানুয়ারী, ২০২৩
26 Nov 2024 01:44 am
দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে ১৯৪৮ সালের এই দিনে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে মিয়ানমার (তৎকালীন বার্মা)। বুধবার (৪ জানুয়ারি) ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস তথা ডায়মন্ড জুবিলি উদ্যাপন করছে দেশটি। এই স্বাধীনতা দিবসকে নিজেদের শক্তি-সামর্থ প্রদর্শনের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে দেশটির জান্তা সরকার।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বুধবার রাজধানী নেপিদোর প্যারেড গ্রাউন্ডে ভাষণ দেন সেনা সরকারের প্রধান ও সেনাবাহিনীর সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং। তার এ ভাষণ মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করা হয়। ভাষণে মিন অং হ্লাইং কিছু দেশের সমালোচনা করেন। বলেন, কিছু দেশ তার দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।
তবে প্রতিবেশি দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান হ্লাইং। তিনি বলেন, ‘আমরা সেই সব দেশ, সংগঠন ও ব্যক্তিদের ধন্যবাদ দিতে চাই যারা আন্তর্জাতিক চাপ ও সমালোচনার মধ্যেও দীর্ঘদিন ধরে ইতিবাচক ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।’
জান্তাপ্রধান বলেন, ‘চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, লাওস ও বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। সীমান্তের স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাব।’ ভাষণে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করলেও রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কোনো কথা বলেননি হ্লাইং।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে ঘরবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয় ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এসব রোহিঙ্গাকে তাদের নিজ ভূমিতে ফেরাতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।
এরপর চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় একটি চুক্তি হয়েছে। তবে পাঁচ বছরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। উল্টো রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন এখনো অব্যাহত রয়েছে।
স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারে বহু দলের অংশগ্রহণে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন আয়োজন করা হবে। তবে কবে নির্বাচন হবে সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। জান্তাপ্রধান বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে।
এ ছাড়া স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ৭ হাজার ১২ জন কারাবন্দীকে মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। স্বাধীনতা দিবসে রোহিঙ্গাবিরোধী মুসলিমবিদ্বেষী বলে খ্যাত বৌদ্ধ ভিক্ষু আশিন উইরাথুসহ শতাধিক ব্যক্তিকে সম্মানজনক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দিয়েছে জান্তা সরকার।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ কারণে দেশটিতে দেখা দেয় রাজনৈতিক সংকট ও জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ।
এরপর থেকে মিয়ানমারজুড়ে বিক্ষোভ দমনের নামে চলছে জান্তার দমন-পীড়ন। প্রাণ গেছে হাজারের বেশি মানুষের। জান্তার হাতে বন্দি আছেন দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি’সহ অনেক রাজনীতিক। তবে অবৈধ ক্ষমতা দখলের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে বেশ কোনঠাসা হয়ে পড়েছে মিয়ানমার। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নানা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে দেশটি।