মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
30 Dec 2024 12:55 am
সঞ্জু রায়,বগুড়া:-বগুড়ার ধুনটে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব খান মো:নাজমুস শোয়েব এর বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য,বসতবাড়ির জায়গা দখল,রাস্তা বন্ধসহ বিভিন্ন অনিয়ম,দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলায় হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে প্রায় ৫ শতাধিক ছাত্র-জনতা ।
মঙ্গলবার দুপুুরে ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের বিশ্বহরিগাছা গ্রামের পাকা সড়কে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন কর্মসূচিতে ভুক্তভোগিরা ওই উপসচিবের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরসহ তাকে অপসারণের দাবি জানান।
মানবন্ধন কর্মসূচিতে বগুড়া জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি এ্যাডভোকেট রেজানুর ইসলাম খান রেজা বলেন,বিশ্বহরিগাছা গ্রামের বাসিন্দা ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পদমর্যাদার সেটেলমেন্ট অফিসার নাজমুস শোয়েব এলাকায় একটি মসজিদ নির্মান করেন। কিন্তু ইমাম নিয়োগ নিয়ে তার ক্ষমতার দাম্ভিকতায় গ্রামবাসীকে তিনি ওই মসজিদে নামাজ পড়তে দেননি । একারনে গ্রামবাসী পাশেই আরেকটি মসজিদ নির্মান করে সেখানে নামাজ আদায় করে আসছেন।
এ কারনে উপ-সচিব নাজমুস শোয়েব আওয়ামীলীগ সরকারের সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে গ্রামবাসীর চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে দেন।
এছাড়া তিনি মসজিদ ও মাদ্রাসায় নিয়োগ দেওয়ার নামে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে কাউকেই চাকরি দিতে পারেননি।শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত অর্থায়নে নির্মিত মসজিদে নামাজ না পড়ার কারনে নিরীহ গ্রামবাসীকে মিথ্যা মামলায় জেলও খাটিয়েছেন।শুধু তাই নয়,তার এসব অনৈতিক কর্মকান্ডকে সমর্থন না করায় স্বনামধন্য দুই শিক্ষককে আওয়ামী সরকারের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নির্বাহী আদেশে বদলীও করিয়েছেন।
সর্বশেষ গত ১৪ ডিসেম্বর উপ-সচিব নাজমুস শোয়েব গ্রামের বাড়িতে এসে আওয়ামী ক্যাডারদের দিয়ে তার মসজিদে নামাজ না পড়া মুসল্লিদের উপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করে। একারনে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা তাকে মসজিদে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে ধুনট থানা পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করেন।
এ্যাডভোকেট রেজানুর ইসলাম খান আরো বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলেও উপ-সচিব নাজমুস শোয়েব এখনও ক্ষমতার অপব্যবহার করে গ্রামের নিরীহ মানুষদের মিথ্যা মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানি করে আসছেন।তার এসব অনিয়ম,দুর্নীতি ও হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা উপ-সচিব নাজমুস শোয়েবের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা সহ তাকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তার ক্ষমতার রোষানলে যে নিরীহ গ্রামবাসীরা ভোগান্তিতে রয়েছে সেগুলো দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিতেও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে চান্দিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমরুল কায়েস খান বলেন,শুধুমাত্র গ্রামবাসীর পক্ষে কথা বলার কারনে উপ-সচিব নাজমুস শোয়েব ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাকে ও তার বোনকে অন্যত্র বদলী করেছেন।অথচ সুদীর্ঘ বছর নিজের মেধা ও শ্রমে তিনি বগুড়ার মধ্যে বিশ্ব হরিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কে তিনি শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি এনে দিয়েছেন।পাশাপাশি নিজে অর্জন করেছেন শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের গৌরব। শুধুমাত্র উপসচিব শোয়েবের রোষানলের শিকার হয়ে আজ তিনি নানা ভোগান্তিতে রয়েছেন।
তিনি আরো বলেন,আওয়ামী সরকারের সময় তিনি অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন।ঢাকায় তার একাধিক ফ্লাট,বাসাবাড়ি,জমিজমা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।ইতিমধ্যেই তার এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক, ভূমি মন্ত্রণালয় ও বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দপ্তরের লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
মানববন্ধনে স্থানীয় মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন,স্থানীয় স্কুল ও কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ,বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যবৃন্দ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীবৃন্দ,গণমাধ্যমকর্মীসহ নানা শ্রেণী পেশার প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।