মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
30 Dec 2024 02:06 am
উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে: নড়াইলে নতুন ট্রেনে পদ্মা সেতু হয়ে আড়াই ঘণ্টায় ঢাকায়। পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-খুলনা রুটে চালু হয়েছে নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’। নতুন এই ট্রেনটি বিরতি দিয়েছে নড়াইল স্টেশনেও। প্রথম যাত্রায় যাত্রী হতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত নড়াইলবাসী। এই ট্রেন চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হয়েছে। এখন থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবেন নড়াইলবাসী। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ৩৮ মিনিটে প্রথম ট্রেনটি নড়াইল স্টেশনে পৌঁছায়। চার মিনিট যাত্রাবিরতির পর সকাল ৭টা ৪২ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। প্রথম দিন নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টার বেশি পরে ঢাকায় পৌঁছে সকাল সাড়ে দশটায়।
নড়াইল রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল থেকে ঢাকার জন্য ৫০টি সিট বরাদ্দ ছিলো। উদ্বোধনী যাত্রায় ৫০ জন যাত্রীই ট্রেনে ঢাকায় গিয়েছেন। এদিকে নড়াইল থেকে ঢাকায় যেতে পেরে ভীষণ খুশি যাত্রীরাও। কালের সাক্ষী হতে পেরে তাদের মধ্যে ছিলো অন্যরকম অনুভূতি।
এদিন ভোর থেকেই ট্রেন দেখার অপেক্ষায় শত শত মানুষ স্টেশনে ভিড় করেন। খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি সকাল সোয়া সাতটার দিকে নড়াইল স্টেশনে পৌঁছানোর কথা ছিলো। তবে প্রথম দিন হওয়ায় ২০ মিনিটের একটু বেশি দেরিতে স্টেশনে প্রবেশ করে ট্রেন। স্টেশনে পৌঁছানোর পর উপস্থিত উৎসুক জনতা হাত নেড়ে যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানান। যাত্রীরাও হাত নেড়ে উৎসুক জনতাকে শুভেচ্ছা জানান।
ট্রেন যাত্রী মিশকাতুজ্জামান এ প্রতিবেদক উজ্জ্বল রায়কে বলেন, এক সময় নড়াইল থেকে বাসে ঢাকায় যেতে ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগত। পদ্মা সেতু ও নড়াইলের মধুমতি সেতু হওয়ার পর ৩-৪ ঘণ্টায় ঢাকা যাওয়া যায়। এখন ট্রেন চালু হওয়ার কারণে আমরা আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা যেতে পারব। আজকে প্রথম যাত্রী হতে পেরে ভীষণ খুশি লাগছে। নড়াইল জেলা যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গেল।
আরেক যাত্রী মহিদুল ইসলাম বলেন, আমি প্রথম যাত্রায় ঢাকার টিকিট পেয়ে ভীষণ খুশি। আমি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকতে পেরে ভীষণ খুশি। নড়াইল জেলা এক সময় অবহেলিত থাকলেও এখন আমরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে গেলাম। প্রথম দিনে যাত্রী হতে পেরেও খুশি।
নড়াইল শহরের ভওয়াখালী এলাকার ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন বলেন, নড়াইল জেলার ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে কল্পনাও করতে পারিনি। ট্রেন চলাচল করবে শুনে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এসেছি। আমার মতো শত শত মানুষ স্টেশনে এসেছে। সবার মাঝে অন্যরকম একটা আনন্দ বিরাজ করছে। প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ট্রেন আসার পর কেমন লাগছিলো সে অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করতে পারব না। ইচ্ছা হচ্ছিলো ঢাকায় চলে যাই।
গণমাধ্যমকর্মী মো. ইমরান হাসান বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ভোর সকালে স্টেশনে এসেছি। পেশাগত জীবনে অনেক নিউজ কাভার করেছি। তবে আজকের নিউজটা কাভার করতে গিয়ে অন্যরকম অনুভূতি। আমরা নড়াইলবাসী এগিয়ে যাচ্ছি। এক সময়ের অবহেলিত জেলা নড়াইল ট্রেন যোগাযোগের আওতায় আসায় ধীরে ধীরে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে আর্থিকসহ সামগ্রিকভাবে নড়াইল জেলা উন্নয়নের দিকে ধাবিত হবে।
নড়াইল রেল স্টেশনে মাস্টার উজ্জ্বল বিশ্বাস এ প্রতিবেদক উজ্জ্বল রায়কে বলেন, নড়াইলে বাণিজ্যিকভাবে আজ থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হল। এই স্টেশনে প্রথম মাস্টার হতে পেরে আমি গর্বিত। নড়াইল থেকে ঢাকায় স্টেশনের জন্য ৫০টি সিট বরাদ্দ ছিলো। টিকিট চালু হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। অনেকে দাঁড়িয়ে ঢাকায় গিয়েছে। প্রথম দিকে অনেক চাহিদা থাকায় প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রীরা টিকিট পায়নি। আশা করা যায় আগামীতে সমস্যা থাকবে না। তিনি বলেন, ঢাকা-ভাঙ্গা-নড়াইল হয়ে মোট দুটি ট্রেন চলাচল করবে। একটি ট্রেন খুলনা থেকে ছেড়ে এসে নড়াইল হয়ে ঢাকায় যাবে। আরেকটি ট্রেন বেনাপোল থেকে নড়াইল হয়ে ঢাকায় যাবে। ওই ট্রেন দুটি আবার ঢাকা থেকে ছেড়ে নড়াইল হয়ে খুলনা ও বেনাপোলে যাবে।
উল্লেখ্য, রেলওয়ের সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেনটি খুলনা থেকে সকাল ৬টায় খুলনা থেকে ছেড়ে নড়াইলে পৌঁছাবে সকাল সোয়া ৭টার দিকে। চার পাঁচ মিনিটের যাত্রাবিরতির পর নড়াইল থেকে ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছাবে সকাল পৌনে ১০টার দিকে। ঢাকা থেকে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের সময় ছেড়ে নড়াইল হয়ে বেনাপোল পৌঁছাবে ২টা ৪৫ মিনিটে। বেনাপোল থেকে ওই ট্রেনটি কিছুটা যাত্রা বিরতি করে সাড়ে ৩টা ছেড়ে নড়াইল হয়ে ঢাকা পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে। রাত ৮টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি নড়াইল হয়ে খুলনায় পৌঁছাবে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-খুলনা রুটে তিনটি ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে দুটি আন্তনগর ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ও ‘চিত্রা এক্সপ্রেস’। আর একটি ‘নকশিকাঁথা’ কমিউটার ট্রেন চলাচল করে। নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি। এর মধ্যে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া হয়ে খুলনায় যাচ্ছে। এতে প্রায় ৮ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। অন্যদিকে চিত্রা এক্সপ্রেস বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়েই চলাচল করছে। এই ট্রেনের সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টা। এর বাইরে বেনাপোল এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া হয়ে যশোরের বেনাপোলে যায়। এতে সময় লাগছে সাড়ে ৭ ঘণ্টা। আর ঢাকা-খুলনা রুটের কমিউটার ট্রেন নকশিকাঁথায় ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে।