শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪
02 Nov 2024 12:31 am
মহান আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির মতো তাঁর পবিত্র নামগুলোর মর্যাদা অন্তরে ধারণ করা এবং তা আচরণে প্রকাশ করা আবশ্যক। মুমিনের কাছে আল্লাহর নাম ও তাঁর স্মরণ সবচেয়ে মর্যাদাকর বিষয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা করো আল্লাহ তা জানেন।
(সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)
আল্লাহ নামের সম্মান
মহান আল্লাহর সত্তার মতো তাঁর নামের মর্যাদা অসীম। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াত থেকে তাঁর নামের সম্মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যেমন—ইরশাদ হয়েছে, ‘কত মহান তোমার প্রতিপালকের নাম, যিনি মহিমময় ও মহানুভব।’ (সুরা : আর রহমান, আয়াত : ৭৮)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, রূপদাতা—তাঁরই সব উত্তম নাম।
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ২৪)
নামের সম্মান অপরিমেয়
মহান আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির মতো তাঁর পবিত্র নামগুলোর সম্মান ও মর্যাদা অপরিমেয়। কোনো মানুষের পক্ষে তাঁর যথাযথ স্তর নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, আমার প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়, তাহলে আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হওয়ার আগেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে—আমরা তাঁর সাহায্যার্থে তাঁর অনুরূপ আরো সমুদ্র আনলেও।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ১০৯)
মানুষের দায়িত্ব
মানুষের দায়িত্ব হলো মহান আল্লাহর নামের যথাসাধ্য সম্মান করা, বরং যথোচিত সম্মানের চেষ্টা করা, তাঁর সম্মান ও মর্যাদার স্বীকারোক্তি দেওয়া। আর তা হবে নিজের বিশ্বাস, ভক্তি, ভালোবাসা, ইবাদত, আনুগত্য ও আচরণের মাধ্যমে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়ছে, ‘তোমাদের কি হয়েছে যে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করছ না! অথচ তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন পর্যায়ক্রমে।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ১৩-১৪)
যেভাবে সম্মান প্রদর্শন করবে
অভিজ্ঞ আলেমরা বলেন, মানুষ আল্লাহর মহান নামের প্রতি তিনভাবে সম্মান প্রদর্শন করবে।
তাহলো—
১. সম্মান স্বীকার করে : মুমিন তাঁর অন্তরে, মুখে ও কাজের মাধ্যমে আল্লাহর নামের সম্মান ও মর্যাদা স্বীকার করে নেবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কি হয়েছে যে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করছ না! অথচ তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন পর্যায়ক্রমে।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ১৩-১৪)
২. নামের মাহাত্ম্য ঘোষণা করে : মুমিন আল্লাহর নাম মাহাত্ম্যের সঙ্গে ঘোষণা করবে। নবীজি (সা.) যেমনটি নামাজের দোয়ায় (সানা) শিখিয়েছেন—‘তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সঙ্গে। তোমার নাম মঙ্গলময়, উচ্চ তোমার মহিমা এবং তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৮৯৯)
৩. নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করে : যেহেতু বান্দা আল্লাহর যথোপযুক্ত সম্মান ও মর্যাদা প্রকাশে অক্ষম, তাই সে আল্লাহর সামনে নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করবে। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) এভাবে দোয়া করতেন, ‘হে প্রভু! আপনার মহিমান্বিত চেহারার এবং আপনার রাজত্বের উপযোগী প্রশংসা আপনার জন্য।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮০১)
যেসব কাজে সম্মান জাগ্রত হয়
কিছু কাজের মাধ্যমে অন্তরে আল্লাহর নামের প্রতি সম্মান জাগ্রত হয়। যেমন—
১. আল্লাহর ধ্যান করা : আল্লাহর ধ্যান মানুষকে আল্লাহর মর্যাদা সম্পর্কে অবগত হতে সাহায্য করে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তুমি আল্লাহর প্রতি ধ্যান রাখো, তাঁকে তোমার সামনে পাবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৬)
২. বেশি বেশি জিকির করা : পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত ও আল্লাহর জিকির মানুষের অন্তরে আল্লাহর সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন তারাই, যাদের হৃদয় কম্পিত হয়, যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের কাছে পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের ওপরই নির্ভর করে।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২)
৩. আল্লাহকে ভয় করা : অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত থাকলে আল্লাহর নামের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমরা মুমিন না হয়ে মৃত্যুবরণ কোরো না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০২)
৪. আল্লাহর শিআরকে সম্মান করা : আল্লাহর শিআর তথা দ্বিনের প্রতীকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা মুমিনের ঈমানি দাবি। ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করলে তা তো তার হৃদয়ের তাকওয়াসঞ্জাত।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩২)
৫. আল্লাহর ভালোবাসা প্রার্থনা করা : আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও অনুরাগ তাঁর নামের প্রতি বান্দার ভালোবাসা জাগ্রত করে। এ জন্য নবীজি (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার পবিত্র চেহারার দর্শনের স্বাদ এবং আপনার সাক্ষাতের প্রতি অনুরাগ প্রার্থনা করছি।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৩০৬)
সম্মান না করার শাস্তি
যারা আল্লাহর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে না তাদের প্রতি কোরআনের একাধিক স্থানে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। যেমন—আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহর যথোচিত সম্মান করে না। কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোয় এবং আকাশমণ্ডলী থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় তাঁর ডান হাতে। পবিত্র ও মহান তিনি, তারা যাকে শরিক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।’ (সুরা : ঝুমার, আয়াত : ৬৭)
উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা সাদি (রহ.) বলেন, ‘মুশরিকরা আল্লাহর যথাযথ মর্যাদা নির্ণয় করতে পারেনি, তারা তাঁর যথোচিত সম্মানও করতে পারেনি, বরং তারা এমন কাজ করে, যাতে আল্লাহর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। যেমন—আল্লাহর সঙ্গে তাদের শরিক করা, যারা সত্তা, গুণাবলি, কাজ, উপকার, ক্ষতি ইত্যাদি কোনো ক্ষেত্রেই তাঁর সমকক্ষ নয়। সৃষ্টিজগতের কেউ আল্লাহর সমকক্ষ নয়, বিপরীতে আসমান-জমিন ও তার ভেতর যা কিছু আছে সব কিছু আল্লাহর পবিত্রতা ও বড়ত্ব ঘোষণা করে, তাঁর আনুগত্য করে।’ (তাফসিরে সাদি : ১/৭২৯)
আল্লাহ সবাইকে তাঁর নামের সম্মান রক্ষা করার তাওফিক দিন।আমিন।
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
কালের কণ্ঠের