বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪
14 Nov 2024 12:40 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন, ওই ভাষণ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীর মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে দুই দলের মধ্যে মতের মিল থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে তাদের দুই ধরনের বক্তব্য উঠে এসেছে।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় গত সোমবার বিএনপির পক্ষ থেকে এক ধরনের আক্ষেপ প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনামুখর না হলেও তাদের প্রত্যাশা যে পূরণ হয়নি, নেতাদের বক্তব্যে সেটি স্পষ্ট।
অন্যদিকে জামায়াত প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। সরকারকে সময় দিতে চায় দলটি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে আন্দোলনে ছিল বিএনপি ও জামায়াত। এবারও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দুই দলের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ ছিল।
তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একটি স্পর্শকতার ইস্যুতে দুই দলের মধ্যে এক ধরনের টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।
আবার জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করতে চাইলেও জামায়াতের মধ্যে তাড়া দেখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে দুই দলের মধ্যে যোগাযোগ অনেকটা সীমিত হয়ে আসছে বলেও ধারণা দিয়েছেন অনেকে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়।
৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার দুই সপ্তাহের বেশি সময় পর গত রবিবার জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভাষণে বিচার বিভাগ, পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।
পরে সোমবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। তবে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে রোডম্যাপ না থাকায় নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি বলে মনে করেন তিনি।
‘কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়’—জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যের জবাবে সোমবার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘এখনো একটা জিনিস ধোঁয়াশা, যেটা আমার পরিষ্কার হয়নি।
যেটা আমি আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা একটা রোডম্যাপ দেবেন, গণতন্ত্রের পথে কিভাবে যাবেন, কিন্তু আমরা পাইনি। সংস্কারের কথা বলেছেন, কিন্তু কোন কোন খাতে সংস্কার আনবেন, সে ব্যাপারে কিছু আভাস দিয়েছেন। আমি জানি, এত অল্প সময়ে সেটা সম্ভব নয়। তার পরও একটা ধারণা দিলে ধারণা করতে পারতাম যে ভালোর দিকে যাচ্ছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গণতন্ত্রহীন দেশ চলতে পারে না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। নির্বাচনের বিষয়ে তাদের একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ থাকা উচিত। সেই বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের রহস্য তৈরি হয়েছে।’
বিএনপির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, সরকার পরিচালনার দায়িত্বে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা না থাকলে এক ধরনের অসন্তোষ তৈরি হয়। সেই ধরনের প্রেক্ষাপট তৈরি হওয়ার আগেই অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারকাজে হাত দেওয়া উচিত। আমরা মনে করি, সংস্কারের বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। তাই সরকারকে সুনির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংস্কার করে নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে।
অবশ্য প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে জাতির আকাঙ্ক্ষার প্রতিধ্বনি হয়েছে বলে মনে করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গত সোমবার রাজধানীতে এক কর্মসূচিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সরকার সঠিক পথে আছে বলে তাঁরা মনে করেন।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর যেহেতু ধৈর্য ধরেছেন, আরো কিছুটা সময় ধৈর্য ধারণ করুন। অন্তর্বর্তী সরকারকে গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিন। তাদের এভাবে ব্যতিব্যস্ত রাখলে তারা কাজ করবে কিভাবে?’
জামায়াত নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা জানান, এখন জনসম্পৃক্ত কাজের দিকে তাঁদের বেশি মনোযোগ। মানুষের কাছাকাছি গিয়ে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে চান তাঁরা। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ শাসনামলে প্রকাশ্য কার্যক্রমে সেভাবে সুযোগ না পাওয়ায় এখন তাঁরা মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। সংসদ নির্বাচন দেরিতে হলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পাবেন তাঁরা।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা গোটা শাসনব্যবস্থার সংস্কার চাচ্ছি। কারণ গত ১৫ বছরে দুর্নীতি ও লুটপাটের যে নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে, তাতে বড় ধরনের সংস্কার দরকার। সে জন্য সরকারকে সময় দিতে হবে। তাতে লম্বা সময় লাগলেও সরকারকে দিতে হবে।’
কালের কণ্ঠের