বুধবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৪
14 Nov 2024 11:11 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- বিএনপি-জামায়াতন্থী বঞ্চিত কর্মকর্তারা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরছেন। দীর্ঘদিন ধরে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা), কম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে কর্মরত ও পদোন্নতি না পাওয়া ১৯ জন কর্মকর্তাকে গতকাল মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। পর্যায়ক্রমে বঞ্চিত সব কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বদলি করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সরকারি অফিস খোলার ঘোষণার পর মঙ্গলবার অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী সচিবালয়ে এসেছিলেন।
কিন্তু দুপুর ১টার মধ্যেই প্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারী সচিবালয় থেকে বের হয়ে যান।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাড়ে ১৫ বছর ধরে বঞ্চিত প্রশাসনের দুই শতাধিক কর্মকর্তা গতকাল সচিবালয়ে আসেন। এ সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের দায়ে চাকরিচ্যুত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীও উপস্থিত ছিলেন। বঞ্চিত প্রত্যেক কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বদলির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চাপ দেন।
তাঁদের চাপের কারণে গতকাল ই-ফাইলে (অনলাইনে) তাৎক্ষণিকভাবে ১৯ কর্মকর্তার বদলির ফাইল উপস্থাপন করা হয় এবং অনুমোদন দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ১৯ কর্মকর্তার প্রত্যেককে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে।
তাঁরা প্রত্যেকে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং সিনিয়র সহকারী সচিব। এর মধ্যে আছেন ১১তম ব্যাচের জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উপপরিচালক ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, ১৩তম ব্যাচের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, ১৫তম ব্যাচের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ও সিনিয়র সহকারী সচিব মো. বাবুল মিঞা।
প্রশাসন ক্যাডারের ১১তম, ১৩তম ও ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা বর্তমানে সচিব পদে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ এসব কর্মকর্তা গত সাড়ে ১৫ বছরে উপসচিবও হতে পারেননি। ১৭তম ব্যাচের ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মো. ইউনুছ আলী, কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম তরিকুল আলম, পঞ্চবটি থেকে মুক্তারপুর ব্রিজ পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুর রহমান তরফদার, ভূমি আপিল বোর্ডের শাখাপ্রধান কানিজ মওলা, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সলিমুল্লাহ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফিরোজ সরকার, ১৮তম ব্যাচের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ফজলুর রহমান; ১৭ ও ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
২০তম ব্যাচের টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) উপপরিচালক কে এম আলী আযম, ২২তম ব্যাচের বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের উপপরিচালক মু. বিল্লাল হোসেন; ২০ ও ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তারা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
২৪তম ব্যাচের বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরজাহান খানম, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের প্রেস কর্মকর্তা জসিম উদ্দীন, ভূমি আপিল বোর্ডের শাখাপ্রধান হোসনা আফরোজা ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপপরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম; ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির কাজ শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২৫তম ব্যাচের ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফরিদা খানম ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সগীর হোসেন; ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা কয়েক বছর আগে উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
১৩তম ব্যাচের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের কথা বলে সাড়ে ১৫ বছর ধরে অনেক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তাকে পর্যায়ক্রমে জনপ্রশাসনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বদলি করে দ্রুত পদোন্নতি দিতে হবে। এ প্রক্রিয়া গতকাল শুরু হয়েছে। সচিবালয়ের বাইরে থাকা অন্য কর্মকর্তাদেরও দ্রুত বদলি করা হবে।
এদিকে শেখ হাসিনার শাসনামলে পদোন্নতিবঞ্চিত দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী গতকাল সচিবালয়ের লাইব্রেরিতে একটি সভা করেন। এর আগে সকাল ১০টায় সচিবালয়ে প্রবেশ করেন বঞ্চিত কর্মকর্তারা। তাঁরা প্রথমে জনপ্রশাসনসচিবের কক্ষে যান। এরপর তাঁরা যান মন্ত্রিপরিষদসচিবের দপ্তরে। সেখানে তাঁরা সচিবের রুমে ঢুকে সচিবকে না পেয়ে বেরিয়ে আবার জনপ্রশাসনসচিবের দপ্তরে প্রবেশ করেন। মন্ত্রিপরিষদসচিব ও জনপ্রশাসনসচিব এ সময় অফিসে ছিলেন না।এরপর তাঁরা সচিবালয়ের লাইব্রেরিতে সভার আয়োজন করেন।সভায় সভাপতিত্ব করেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রশাসন ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মাহবুবুর রহমান। অন্যদের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা ড. আব্দুস সবুর, ৮৫ ব্যাচের জাকির হোসেন কামাল, ৮৪ ব্যাচের ওয়াহিদ জামান, ১৩ ব্যাচের মাহফুজুর রহমান, ১১ ব্যাচের এহসানুল হক, ২০ ব্যাচের মির্জা আলী আশরাফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রটোকল অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম, ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা খালেদা জিয়ার এপিএস সুরুতুজ্জামান, ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম, ২৪ ব্যাচের নুর জাহান খানম, বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের মহাসচিব তোয়াহা মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
কালের কণ্ঠ