শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪
16 Nov 2024 03:36 am
বগুড়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল আজ বৃহস্পতিবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে বগুড়ার ক্ষয়ক্ষতি দেখতে এসেছিলেন। তিনি বিকেলে হেলিকপ্টারযোগে বগুড়া পুলিশ লাইন্সে নেমে শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় আসেন। সেখানে তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়, জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনির বাণিজ্যিক কার্যালয়, হামলার শিকার মুজিব মঞ্চ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, অস্থায়ী পুলিশ বক্স ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অস্থায়ী কার্যালয় দেখেন। এরপর তিনি শহরের বড়গোলাস্থ সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার(ভূমি) এর ক্ষতিগ্রস্ত কার্যালয় দেখতে যান।
বগুড়ার ক্ষয়ক্ষতি দেখে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। এরপর মন্ত্রী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষ করতোয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে মত বিনিময় করেন। মতবিনিময়কালে বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ মজিবর রহমান মজনু, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপুসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় তিনি উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ছাত্ররা শুরু করলেও পরবর্তীতে সেই আন্দোলনে জামায়াত বিএনপির সন্ত্রাসীরা ঢুকে জ্বালাও পোড়াও করেছে। তিনি বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একমত হওয়ার কারণেই উচ্চ আদালতে আপিল করে। আপিলের রায় ছাত্রদের পক্ষে এসেছে। ছাত্ররা যে ৮ দফা দাবি দিয়েছে সেই দাবিও সরকার দেখছে।
মতবিনিময় শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, সরকার কোটা বিলুপ্ত করে দিয়েছিলো। এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংক্ষুদ্ধ হয়ে হাইকোর্টে রীট করে। সেই রীটে কোটা বহাল রাখে আদালত। কোটা বহাল রাখার পর ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী সেই সময় বিদেশে ছিলেন। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন হওয়ায় সরকার পক্ষকে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে বলেন। রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। সরকার পক্ষ আপিল করার পরও ছাত্ররা আন্দোলন চালিয়ে যায়। তিনি বলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে কোটা সংস্কার করে মেধা ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ ১ শতাংশ এবং ন-ৃজাতি গোষ্ঠির জন্য ১ শতাংশ করা হয়েছে। তিনি বলেন এখন বলা চলে মেধার কোটা ৯৮ শতাংশ।
মন্ত্রী আরও বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের পর মনে করেছিলাম কোটা আন্দোলনকারীরা রায়কে স্বাগত জানিয়ে ধন্যবাদ দিবে, সাধুবাদ জানাবে; কিন্তু তারা তা করেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোটা আন্দোলনে ভর করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভাঙচুর করেছে। যারা বাংলাদেশ চায়নি, স্বাধীনতা চায়নি; সেই দলগুলো সারাদেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে। তারা দেশের মূল্যবান স্থাপনা ধ্বংস করতে চেয়েছে। বগুড়ায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদে হামলা করেছে, জাতির জনকের ম্যুরালের উপর হামলা করেছে। যারা স্বাধীনতা চায়নি তারা এটা করেছে। ভূমি অফিস, জাজেস কোয়ার্টারে হামলা করেছে। তারা দেশের শত্রু। তিনি নরসিংদীর কারাগার ভেঙে জঙ্গি ছিনতাই করা প্রসঙ্গে বলেন, কারাগার ভেঙে জঙ্গি নিয়ে গেছে। কারণ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে- এটা তাদের পছন্দ না।
মন্ত্রী ছাত্রদের শান্ত থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এই আন্দোলনে ৩ জন পুলিশ, আওয়ামীলীগ কর্মী, ছাত্রলীগ কর্মীও শাহাদৎ বরণ করেছে।
মন্ত্রী বলেন, সেতু ভবন, মেট্রোরেল, ডাটাএন্ট্রি সেন্টার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেতু ভবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাপজপত্র ছিলো, মেট্রোরেলে নকশা ছিলো সব পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং ভবন পুড়িয়ে দিয়ে দেশকে পিছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তিনি বলেন সন্ত্রাসিরা ঢাকার বিভিন্ন থানা জ¦ালিয়ে দিয়েছে। বিটিভি ভবন পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি যেখানে রয়েছে সেই টেলিভিশন সেন্টার পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ কাজ করছে। খুব শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
শেষে তিনি বগুড়া ত্যাগের আগে দুবৃত্তদের হামলার শিকার জাজেস কোয়ার্টারও পরিদর্শন করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ১১ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার, বগুড়া এরিয়া মেজর জেনারেল খালেদ আল মামুন, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনিসুর রহমান, বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো: সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো: জাকির হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।