সোমবার, ০১ জুলাই, ২০২৪
16 Nov 2024 04:02 am
৭১ভিশন ডেস্ক:- গত ২২ জুন ভারতের সাথে যে সকল সমঝোতা-চুক্তি হয়েছে সেগুলোকে প্রত্যাখান করেছে বিএনপি। সেই সঙ্গে এসব চুক্তি দেশকে আজীবনের জন্য ভারতের গোলামে পরিণত করবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (৩০ জুন) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতার নানা দিক তুলে ধরে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা ভারতের সাথে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে, তা গোলামির নবতর সংস্করণ। সমঝোতার আড়ালে যে সকল চুক্তি করা হলো, তা বাংলাদেশকে আজীবনের জন্য ভারতের গোলামে পরিণত করবে। এর ফলে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমরা পুনর্ব্যক্ত করতে চাই, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা বিরোধী এই সকল চুক্তি জনগণ কখনো মেনে নেবে না। বিএনপি এই সকল দেশবিরোধী চুক্তি-সমঝোতা প্রত্যাখান করছে।
ভারতের সঙ্গে করে সমঝোতা-চুক্তিগুলো দেশের স্বার্থের সম্পূর্ণ বিরোধী উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব চুক্তি-সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে আমাদের দেশের প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি ভারতের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার অংশে পরিণত করা হয়েছে। যা খুবই বিপদজনক এবং দেশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি। এটি শান্তির সহাবস্থান ও জোট নিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থি।
এই সকল সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে নিরাপত্তার কৌশলগত ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে ভারতকে ব্যবহারের সুযোগ দিতে চায় বলেও মন্তব্য করেন বিরনপির এই সিনিয়র নেতা। ফখরুল বলেন, এর ফলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জটিলতার মধ্যে জড়িয়ে পড়বে। যে ৭টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে সেগুলোর প্রায় সবগুলোই দেশের উত্তরাঞ্চলকেন্দ্রিক।
প্রয়োজনের সময়ে বাংলাদেশ ভূখকে ভারতের সামরিক ও বেসামরিক পণ্য পরিবহনের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘চিকেন নেক’কে বাইপাস করে ব্যবহার করার সুদূরপ্রসারি মহাপরিকল্পনা থেকেই এসব চুক্তি করা হয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের গোলামি চুক্তির গভীর ফাঁদে ফেলার ঘৃণ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
সম্পাদিত চুক্তি-সমঝোতায় দেশের প্রাপ্তি শূন্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, নানা নাম দিয়ে যে দশটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলো, তাতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি শূন্য। দেশের স্বার্থ সংরক্ষণের চাইতে ভারতের কাছে শেখ হাসিনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দায়বদ্ধতা থেকে এসব স্মারক সই হয়েছে, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট। এগুলোর সাথে বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পুরণের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই। সেই কারণেই বহু পূর্বে ভারত ঘোষিত সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের ভারতীয় চুক্তি (লাইন অব ক্রেডিট-এলওসি) বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া তরান্বিত করার বিষয়ে এই সফর (শেখ হাসিনার সফর) ছিলো নীরব।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএসএফের গুলিতে প্রতিবছর রেকের্ড পরিমাণ সীমান্ত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবার পরেও প্রধানমন্ত্রীর সফরে এ বিষয়টিতে বাংলাদেশ সরকার চূড়ান্তভাবে নির্লিপ্ত থেকেছে। ভারত-নেপাল, ভারত-চীন ও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তেও এই পরিমাণ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেখা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশে অহরহ সীমান্তে হত্যা হচ্ছে।
শেখ হাসিনার সফরসহ ভারতের সাথে ইতোপূর্বে স্বাক্ষরিত সকল চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির এই যুগে সব বন্ধুরাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অংশীদারিত্ব বাড়াতে নানাভাবে কানেক্টিভিটি তৈরি করার পক্ষেই বিএনপির অবস্থান। কিন্তু সড়কপথ, নৌ পথ বা রেলপথে যেভাবে কানেক্টিভিটি বাড়ানো হোক না কেন, তাতে জাতীয় স্বার্থকে বিবেচনা করতে হবে সর্বাগ্রে। কোনোভাবেই সার্বভৌমত্বের সাথে কম্প্রোমাইজ করা যাবে না। কিন্তু বর্তমান অবৈধ সরকার অবৈধ ক্ষমতা অটুট রাখার হীন স্বার্থে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
পিএনএস