শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪
17 May 2024 01:25 pm
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ-গাইবান্ধায় সাদুল্লাপুর উপজেলার জয়েনপুর আদর্শ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদ মিয়া প্রভাব খাটিয়ে ও বিধি বহির্ভুতভাবে কিশামত শেরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির স্বঘোষিত সভাপতি পদে আসীন রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, সভাপতিত্বের ক্ষমতা বলে তিনি সামান্যতেই ঈর্শান্বিত হয়ে একাধিক শিক্ষক/কর্মচারীর বেতন বন্ধ করেছেন।এছাড়া পরপর দুই জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগেও তিনি মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণ করাসহ বিভিন্নভাবে বিদ্যালয়ের ক্ষতি সাধন করছেন।শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীন সরকারি দলের দোহাই দিয়েও তিনি নানা অনিয়ম করে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিও নষ্ট করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযুক্ত সভাপতি মাহমুদ মিয়ার এসব অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়ের অভিভাবকসহ স্থানীয় সুধিমহল। লিখিত অভিযোগে স্বঘোষিত সভাপতি মাহমুদ মিয়াকে সভাপতির পদ থেকে অপসারণসহ বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষার দাবি জানানো হয়েছে। এরেইমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযোগটি আমলে নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ১৫ এপ্রিল করা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, জয়েনপুর আদর্শ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদ মিয়া। যার এম.পি.ও আইডি নং ঘ-৫৬৮৮৬০৫৬। তিনি বিদ্যালয়ের বিধি অতিক্রম করে এলাকার জনগণের কোনও প্রকার অবগতি ছাড়াই কিশামত শেরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির স্বঘোষিত সভাপতি পদে আসীন হয়েছেন। তিনি স্বঘোষিত সভাপতি হয়ে বর্তমান সরকারী দলের কোন পদে নির্বাচিত না থাকা স্বর্তেও সরকারী দলে তার ঘনিষ্ট সংশ্লিষ্টতার পরিচয়ের দোহাই দিয়ে বর্তমান সরকারের ভাব মূর্তি নষ্ট করছেন এবং বিভিন্নভাবে বিদ্যালয়ের ক্ষতি সাধন করে চলেছেন।
এছাড়া মাহমুদ মিয়া বিদ্যালয়ের পর পর দুইজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ করে প্রায় দশ লাখ টাকা অবৈধ ভাবে ঘুষ গ্রহণ করেন। অথচ সামান্য বৃষ্টি হলেই বিদ্যাঙ্গনে হাটু পরিমান কাঁদার সৃষ্টি হয়। এতে করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলাচলের অনুপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হলেও সামান্য টুকু মাটি দেওয়ার নৈতিকতাও দেখাননি তিনি। শুধু তাই নয়, সভাপতি মাহমুদ মিয়া বিদ্যালয়ের অভ্যান্তরিণ, এমনকি বিদ্যালয়ের বাহিরের সামান্য কোনো ব্যাপার নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তিনি বিদ্যালয়ের বিধি লঙ্ঘন করে অহেতুক শিক্ষক/কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ করে রেখেছেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কিশামত শেরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে রয়েছে সভাপতির মাহমুদ মিয়ার আপন শ্যালক মো. রেজোয়ানুর করিম।যার (এম.পিও ইনডেক্স নং- জ-১০২৯৬৮৩)। এ কারণে সহকারী শিক্ষক রেজোয়ানুর করিম তার ভগ্নিপতি সভাপতি মাহমুদ মিয়ার প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ে নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের সৃষ্টি করছেন।
এছাড়া বিদ্যালয়ে মহিলা ও পুরুষ কক্ষ পৃথক থাকা স্বত্বেও রেজোয়ানুর করিম মহিলা কক্ষে প্রবেশ করে জনৈক এক মহিলা শিক্ষিকার সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপ করেন। এ কারণে উভয়ে দীর্ঘদিন থেকে ক্লাস ফাঁকি দিচ্ছেন।এতে করে পাঠদান থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে সভাপতি মাহমুদ মিয়ার স্বেচ্ছাচারিতা ও নানা অনিয়ম এবং একই সাথে তার শ্যালক রেজায়ানুর করিমের বিদ্যালয় বহির্ভূত অনৈতিক আচারণের ঘটনায় এলাকায় তুমুল আন্দোলনের সৃষ্টি হয়েছে। তাই দ্রুতই সহকারী শিক্ষক রেজোয়ানুর করিমের বিরুদ্ধে উথাপিত অভিযোগগুলোসহ সমুদয় বিষয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুঠফোনে কথা হলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক-সভাপতি মাহমুদ মিয়া বলেন, সারাদেশেই এরকম আছে। আইনে কোনো বাঁধা নেই। তাছাড়া আমার যখন আইডি নম্বরে হয়নি তখন থেকে আমি সভাপতি।
এসময় শিক্ষকের ভাতা বন্ধের প্রশ্নে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাসুদ মিয়া ওই শিক্ষক তো একটা পাগল।পাগলকে কি কেউ কখনো বেতন ভাতা দিতে পারে? আর আমি তার বেতন ভাতা বন্ধ করেনি, বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষই অনেক দিন আগে তার বেতন বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে সাদুল্লাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল হোসেন বলেন,লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভিষয়টির তদন্ত শুরু করা হয়েছে।ইতোমধ্যে অভিযুক্ত সভাপতি ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে আগামি ৬ এপ্রিল স্ব-শরীরে হাজির হয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তাদের জবাব পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবগত করা হবে'।