বুধবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২৪
11 Nov 2024 01:58 am
খোকন হাওলাদার, আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি:-প্রতিবছর একটু বাড়তি উষ্ণতার খোঁজে শীত মৌসুমে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের মতো অপেক্ষাকৃত নাতিশীতোষ্ণ অ লে ছুটে আসে পাখিরা। এর মধ্যে রাজধানীর আশপাশে জলাশয় কমে যাওয়া এবং নদী ভরাট ও দূষিত হয়ে যাওয়ায় এখন অতিথি পাখির দেখা মেলে না। পরিযায়ী পাখি দেখতে চাইলে ভালো গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত রাজধানীর কাছেই সাভার উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)।
গাছপালাসমৃদ্ধ বেশ কয়েকটি বড় লেক ও পুকুর থাকায় শীতে জাবি ক্যাম্পাসে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির আনাগোনা দেখা যেত। কিন্তু সা¤প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, শীতের শুরুতে কিছু পাখি এলেও বেশিদিন থাকছে না। এ বছরও বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি লেক থেকে পরিযায়ী পাখিরা চলে গেছে। শুধু একটি লেকে কিছু পাখি রয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাস সংলগ্ন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের লেকেও পাখিরা বসেছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, এবার শীতের শুরুতে পুরোনো প্রশাসন ভবনের সামনে ও পরিবহন চত্বর সংলগ্ন লেকে পাখি এসেছিল। কিন্তু এখন আর তারা নেই। এসব পাখি সংরক্ষিত এলাকা ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের লেকে বসেছে। মূলত পুরোনো প্রশাসন ভবনের সামনে ও পরিবহন চত্বর সংলগ্ন লেকের পাশের সড়কে মানুষের কোলাহল, যানবাহনের শব্দ লেগেই থাকে। এ ছাড়া লেকগুলোর কচুরিপানা পরিস্কার না করা ও সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের গাফিলতিই পাখি চলে যাওয়ার জন্য দায়ী। এ বছর প্রাণিবিদ্যা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠির মাধ্যমে লেকের কচুরিপানা পরিস্কারের কথা বললেও তা করা হয়নি। অন্যদিকে ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থাপনা না থাকায় দর্শনার্থীরা গাড়ি নিয়ে যেখানে সেখানে চলে যাচ্ছেন।
জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক পাখি বিশেষজ্ঞ কামরুল হাসান বলেন, ক্যাম্পাসের লেকে এখন পর্যন্ত ২০৫ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি শনাক্ত করা গেছে। এখানে প্রতি বছর গড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার পাখি আসে। কিন্তু এগুলোর সংখ্যা দিন দিন কমছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে করোনার কারণে যখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল, তখন ক্যাম্পাসে শব্দ ও মানুষের আনাগোনা কম থাকায় সবচেয়ে বেশি সাড়ে সাত সহস্রাধিক পাখি এসেছিল। ২০২১ সালের শীত মৌসুমে পাখির সংখ্যা কমে হয় সাড়ে চার হাজার। এ বছর পাখি আরও কমে আড়াই থেকে তিন হাজারে নেমেছে। মূলত লেকের পাড়ে দোকানপাটে মানুষের কোলাহল, যানবাহনের শব্দ ও আতশবাজির আতঙ্কে চলে গেছে পাখিরা।
এ ছাড়া সবচেয়ে বড় জয়াপাড়া লেকে দীর্ঘ সময় কচুরিপানা পরিস্কার করা হয় না। কচুরিপানার কারণে লেকে যেমন পাখি বসার পরিবেশ নেই, তেমনি এগুলোর খাদ্যও তৈরি হয় না। তাই এসব বিষয়ে দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমতে থাকবে।
পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, ক্যাম্পাসে উঁচু উঁচু নতুন ভবন হওয়ায় পাখির ফ্লাইং জোন হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে পাখিরা স্বাভাবিক চলাচল করতে পারছে না। এ ছাড়া মানুষ অসচেতনভাবে ব্যবহূত মাস্ক, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য লেকে ফেলায় জলজ প্রাণী এবং পরিযায়ী পাখি বিচরণের স্বাভাবিক পরিবেশ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অ ল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, পাখি যখন ওড়ে, তখন সে সবুজ খোঁজে। বছরের পর বছর জাবি ক্যাম্পাসে শীতকালে পাখি আসার কারণ সবুজ-শ্যামল পরিবেশ। কিন্তু ১০ তলা ভবন হওয়ার ফলে পাখি ওপর থেকে যখন নামতে চাইবে, তখন সবুজ দেখবে না, দেখবে ইট-কংক্রিট। এ কারণে সে আসবে না। বর্তমান সময়ে পাখি কম আসার সবচেয়ে বড় কারণ এটা।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম বলেন, 'আমরা কোলাহল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। কিন্তু প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের অসহযোগিতায় তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। আমি তাঁদের অনুরোধ করব অন্তত গাড়ি বাইরে পার্কিং করে ক্যাম্পাসে হেঁটে আসতে। এ ছাড়া আগামী বছর থেকে পাখি আসার আগেই লেকগুলো পরিস্কারের ব্যবস্থা করা হবে। পাখির আবাসস্থলের কাছাকাছি ছয়তলার বেশি উঁচু ভবন ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হবে না।
এদিকে, প্রতিবছরের মতো এবারও পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী ৩ ফেব্রæয়ারি জাবিতে 'পাখি মেলা' হবে বলে জানান অধ্যাপক কামরুল হাসান। ২০০১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে এ মেলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।