বৃহস্পতিবার, ০৪ জানুয়ারী, ২০২৪
16 Nov 2024 06:55 am
পীরগঞ্জ(রংপুর) প্রতিনিধিঃ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ পীরগঞ্জ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ আসনে নৌকা, লাঙ্গল ও স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীর মধ্যে ভোট যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিগত ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনে রংপুর-৬ পীরগঞ্জ আসনে বঙ্গবন্ধু কন্যা পীরগঞ্জের পুত্রবধূ শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নূর মোহাম্মদ মন্ডলকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার আসন রেখে প্রধানমন্ত্রী পীরগঞ্জ আসনটি ছেড়ে দেন। পীরগঞ্জ থেকে নৌকা প্রর্তীকে শিরিন শারমিন চৌধুরী উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হন।
আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মনোনীত নৌকা প্রতীকের ড.শিরিন শারমিন চৌধুরী ,জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী নূর আলম মিয়া যাদু ও আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বঞ্চিত জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সিরাজুল ইসলাম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় ভোটের সমীকরণ কিছুটা এলোমেলো হয়েছে। এখন পর্যন্ত পোস্টার টানানো, নির্বাচনী সভা, গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারনায় অনেক এগিয়ে আছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ড.শিরিন শারমিন চৌধুরী।
২০১৪ সালে উপ-নির্বাচনে স্পিকার সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই অবহেলিত পীরগঞ্জে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলেও। বিগত সময়ে বিদ্যুত সাব ষ্টেশন কাবিলপুর ও ভেন্ডাবাড়ীতে স্থাপন। যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন, উপজেলা সদরের সাথে ইউনিয়ন পরিষদের সংযোগ সড়কগুলো প্রশস্থকরনসহ লিংক রোড স্থাপন করায় যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়েছে সহজতর। ছোট বড় ১১৪টি সেতু ও কালভার্ট নির্মান। মেরিন একাডেমি, ড. এম এ ওয়াজেদ টেক্সটাইল কলেজ, ট্যাকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা। উপজেলায় ১৪৮টি প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ভবন নির্মান ও সম্প্রসারন। নদী খনন ও বাঁধ নির্মান, নলেয়া খাল খনন,কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার,মিনি স্টেডিয়াম,নীল দরিয়া বিনোদন কেন্দ্রসহ মসজিদ,মন্দির, গীর্জাগুলোকে যুগোপযোগী করে তুলেছেন। সুসম বন্টনে পরিকল্পিত উন্নয়নে সমভাবে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা মডেল উপজেলা করার লক্ষ্যে একাট্টা পীরগঞ্জবাসী।
পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত রংপুর-৬ আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ২৯ হাজার ৭৫৪। নারী ভোটার ১ লক্ষ ৬৫ হাজার পাঁচশত। পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৬৪ হাজার দুইশত ৫৫। হিজরা ৪ জন। এর মধ্যে নতুন ভোটার রয়েছেন ৩৬ হাজার ৭’শ জন। নির্বাচনী পরিসংখ্যানে দেখা যায়,বিগত ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মতিউর রহমান চৌধুরীকে ৩’শ ২৫ ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৫শ বিরানব্বই ভোটের মধ্যে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে এরশাদ পায় ৩৫ হাজার দুইশত ৬০ ভোট। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রর্তীকের প্রার্থী পেয়েছিল ৩৪ হাজার নয়শত ৩৫ ভোট। ১৯৯৬ সালের ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল ও অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামীলীগসহ সব বিরোধী দল শুধু নির্বাচন বর্জন করেই ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিরোধও করে। ফলে রংপুর ৬ আসনের ভোট গ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে ১ লক্ষ ৭০ হাজার ছয়শত উননব্বই ভোটের মধ্যে লাঙ্গল প্রর্তীকের প্রার্থী এরশাদ ৬০ হাজার ছয়শত পয়ষট্টি ভোট পেয়ে ২৩ হাজার ৪ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ মনোনীত একই প্রার্থীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। উপ নির্বাচনে নুর মোহাম্মদ মন্ডল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পীরগঞ্জ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ানম্যান নির্বাচন না করে মনোনয়ন প্রদান করেন নুর মোহাম্মদ মন্ডলকে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ আসনে প্রার্থী হয়ে ১২ হাজার সাতশত উনচল্লিশ ভোটে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। জাতীয় পার্টি ভোট পায় ৯০ হাজার সাত শত ত্রিশ। এরপর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ লক্ষ ৭০ হাজার পাঁচ শত বিয়াল্লিশ ভোট পেয়ে বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রার্থী নুর মোহাম্মাদ মন্ডলকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো পীরগঞ্জ আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগের জাতীয় সংসদের সদস্য হন। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ভোট পায় ৩৮ হাজার ৬শ বাহাত্তরটি। এ নির্বাচনে নুর মোহাম্মদ মন্ডল জাতীয় পার্টি ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে উপনির্বাচনে আবুল কালাম নৌকা প্রর্তীকে নির্বাচিত হন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে রংপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে নূর আলম যাদু মিয়া, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলাম স্বতন্ত্র ট্রাক প্রর্তীক, কাঁচি প্রর্তীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সম্পুর্ন নতুন মুখ তাকিয়া জাহান চৌধুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেস নামের রাজনৈতিক দল থেকে মাহবুল আলম ডাব প্রর্তীক, জাকারিয়া হোসেন কল্যাণ পার্টির হাত ঘড়ি প্রর্তীক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি(এনপিপি) থেকে হুমায়ুন ইজাজ লেভিন (আম) প্রর্তীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ শক্তিশালী এক সংগঠন। তৃণমুল পর্যায়েও সাংগাঠনিক ভিত্তি অনেক মজবুত। নিরলস কাজ করে চলেছেন সব পর্যায়ের নেতা কর্মিরা। এসব ছাড়াও অনেকগুলো পেশাজীব সংগঠন নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার লক্ষে বিরামহীন প্রচারনার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
মোঃ আকতারুজ্জামান রানা