মঙ্গলবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৩
14 Nov 2024 12:47 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশের উপর বর্বরোচিত হামলায় পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ হত্যার ঘটনায় হামলায় নেতৃত্বদানকারী কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব মোঃ আমান উল্লাহ আমানকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের একটি টিম।
সোমবার (৬ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম-বার।
সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর আমান উল্লাহ আমান বিএনপি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে সমাবেশের দিন তার অনুসারীদের নিয়ে নয়াপল্টনে মঞ্চের পাশে অবস্থান নেয়। মঞ্চে অবস্থিত বিএনপি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা ছিল পুলিশের উপর বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলার মাধ্যমে পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া। প্রয়োজনে এক বা একাধিক পুলিশ সদস্যকে হত্যার মাধ্যমে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা। যাতে করে একটি নতুন ইস্যুর সৃষ্টি হয়।
সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, কাকরাইলে সমাবেশে উপস্থিত বিএনপি কর্মীরা পুলিশের উপর হামলা করলে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। কাকরাইলে সংঘর্ষের সুযোগ নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের হাইকমান্ড নেতাদের নির্দেশে নয়া পল্টনে বিএনপির অফিসের পাশে ভিক্টরি হোটেলের পাশের গলি দিয়ে আমান উল্লাহ আমান ছাত্রদলের একটি বড় অংশ নিয়ে পুলিশের উপরে হামলা করার জন্য অগ্রসর হয়। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে পূর্ব থেকেই তাদের জানা ছিল। আমান তার দলবল নিয়ে পল্টন টাওয়ারের সামনে এসে অগ্রসরমান দলের একটি অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে বিজয়নগর পানির ট্যাংকের দিকে যায় এবং অপর অংশটি আমানের নেতৃত্বে বক্স কালভার্ট রোডের পূর্ব প্রান্তের দিকে অগ্রসর হয়। বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছানোর পরে ছাত্রদলের কর্মীরা সেখানে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের উপরে অতর্কিত হামলা করে। এ সময় বক্স কালভার্টের পশ্চিম প্রান্তে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদেরকে সাহায্য করার অভিপ্রায়ে পূর্ব প্রান্তের পুলিশ সদস্যরা বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়। পশ্চিম দিকে অগ্রসরমান পুলিশ দলটির উপরে আমানের নেতৃত্বে ও তার নির্দেশনায় হামলা শুরু হয়। ছাত্রদলের এই অংশটি আমানের নেতৃত্বে পুলিশদের উপরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছাত্রদলের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। জানমাল রক্ষা ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য পুলিশ সদস্যরা জীবনহানিকর মারণাস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে এবং সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দেয়।
সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, এই পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের একটি বড় অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পূর্ব দিকে অবস্থিত ডিআর টাওয়ারে অবস্থান নেয় এবং অন্য কয়েকজন পুলিশ সদস্য পাশের ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে অবস্থান নেয়। আমানের নেতৃত্বে তারা পুলিশ সদস্যদেরকে হামলা করার জন্য ক্রমাগত ডিআর টাওয়ারের ভিতরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। অপরদিকে আন্ডারগ্রাউন্ডে অবস্থানরত পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে আমানের নেতৃত্বে সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা টেনে হিচড়ে রাস্তায় নিয়ে আসে এবং অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করার উদ্দেশ্যে লাঠি দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে। এসময় কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীর গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। নাশকতাকারীরা কনস্টেবল পারভেজের নিথর দেহের উপরে বর্বরভাবে আঘাত করতে থাকে। তার মৃত্যু নিশ্চিত করার পরে আমান উল্লাহ আমান তার অনুসারীদেরকে নিয়ে বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম দিক দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, আমান উল্লাহ আমানকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।