শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩
06 Nov 2024 12:39 am
জাহাঙ্গীর আলম মানিক,সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: বর্তমানে উর্দ্ধমুখী আদার বাজারে আদাকিনতে যখন সাধারণ মানুষের ত্রাহি অবস্থা সে সময় বস্তায় আদা চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার পাটিআমলাই গ্রামের কৃষানি নার্গিস বেগম। স্বামী রুহুল আমিনকে সাথে নিয়ে আম ও লিচু বাগান ও বাড়ির আশে পাশে খোলা জায়গায় ১৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ করে তিনি ছিনিয়ে এনেছেন সাফল্য। কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই তিনি ইউটিউব দেখে অনুপ্রাণীত হয়ে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেন এবং সাফল্যের মুখ দেখেন। তার এই আদা চাষ পদ্ধতি দেখে প্রতিদিন দুর-দুরান্ত হতে কৃষকরা তার বাগানে আসছেন এবং অভিজ্ঞতা লাভ করছেন। সম্প্রতী সরেজমিনে কৃষানি নারগিস বেগমের আদার ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় তিনি বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তার ৩৮ শতাংশের আমবাগান, ৫০ শতাংশের লিচুবা গান, বাড়ির পাশের ফাঁকা জায়গায় সারি সারি বস্তা। এ সকল বস্তায় শোভা পাচ্ছে লকলকে আদা গাছের চারা। আলাপচারিতায় তিনি জানান, তারা কৃষি কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। নিজেদের সামান্য কিছু জমি ও অন্যের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে যে আয় হয় তা দিয়েই কোন রকমে চলে যায় সংসার। তবে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে প্রকৃতির বিরুপ প্রভাবে আগের মতো কৃষি জমিতে আর ফলন হয়না। কৃষি জমির বহুমুখী ব্যবহারের চিন্তা থেকে কয়েক বছর আগে লীজ নেওয়া ৮৮ শতাংশ জমিতে আম ও লিচুবা গান করি। এর ইমধ্যে ইউটিউব দেখে আম ও লিচু বাগানের মধ্যে মিশ্র ফসল হিসাবে বস্তায় আদা চাষের ভাবনা মাথায় আসে। এই ভাবনা থেকেই ২০২২ সালে ৩৮ শতাংশের আম বাগানে ৪ হাজার বস্তায় আদা চাষ করি। উৎপাদিত আদা ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রয় করি এবং এখান থেকে আমার আয় আসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। প্রথম বছর পরীক্ষামুলকভাবে বস্তায় আদা চাষের সাফল্য আমাকে অনুপ্রাণীত করে এবং এ বছর ৮৮ শতাংশ আম ও লিচু বাগানে ১৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ করছি। বর্তমানে প্রতি বস্তা আদার উৎপাদন খরচ ২৫ টাকা হিসাবে আমার মোট উৎপাদান খরচ হবে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। প্রতিটি বস্তায় ৬শত থেকে ৭শত গ্রাম আদা পাওয়া যাবে। আদার বর্তমান বাজার দর বজায় থাকলে এ বছর ২০/২২ লাখ টাকার আদা বিক্রয় হবে। আলাপচারিতায় নার্গিস আরওে জানান, তার স্বামী রুহুল আমিন মাঠে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় আদা গাছের পরিচর্যার দায়িত্ব আমার উপরই বর্তায়। তবে স্বামী রুহুল আমিন তাকে বাগান পরিচর্যায় সহায়তা করেন বলেও জানান। আদা চাষের প্রক্রিয়া বিষয়ে নার্গিস বলেন, পরিমাণ মতো জৈব, রাসায়নিক সার এবং বেলে দোআঁশ মাটির সঙ্গে দানাদার কীটনাশক মিশিয়ে প্রথমে বস্তা ভরাট করা হয়। এর আগে চটের বস্তায় পরিপক্ব আদা ১০-১৫ দিন রাখতে হবে এবং মাঝে মধ্যে পানি ছিঁটে দিতে হবে। চটের বস্তার মধ্যে আদার কুশি বের হলে কুশিসহ আদা কেটে বীজ হিসাবে বস্তাতে লাগাতে হবে। একেকটি বস্তায় ৩/৪টি আদা বীজ লাগানোর পরামর্শ প্রদান করেন এই সফল আদাচাষী নার্গিস। এ বিষয়ে পত্নীতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বস্তায় আদা চাষ দেশের অন্যান্য জেলায় কয়েক বছর আগে থেকে শুরু হলেও নওগাঁয় এই পদ্ধতি নতুন। নার্গিস এই পদ্ধতিতে আদা চাষ করে সফল হয়েছেন। তাদের সাফল্য দেখে এলাকার অনেক কৃষকই আগ্রহী হচ্ছেন। আদা চাষী নার্গিস বেগমকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। কোন কৃষক আদা চাষে উদ্যোগি হলে উপজলা কৃষি অফিস হতে তাকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হবে।