৭১ভিশন ডেস্ক:-সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাথে সাহিত্যকে সংযোজন এর মাধ্যমে, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় নামকরণ করে —এর অধীনে “জাতীয় সাহিত্য অধিদপ্তর” প্রতিষ্ঠাসহ বাঙলা সাহিত্যের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও লেখকদের কল্যাণে ১৫ দফা দাবী বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উন্মুক্ত সংবাদ সম্মেলন করেছে জাতীয় সাহিত্য অধিদপ্তর বাস্তবায়ন পরিষদ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এক্ষনই একটি পূর্নাঙ্গ সাহিত্য মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা সরকারের জন্য ব্যায়বহুল মনে হলে, যেহেতু সাহিত্য ও সংস্কৃতি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাথে সাহিত্যকে যুক্ত করে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে, সাহিত্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে নামকরণের মাধ্যমে এর অধীনে মন্ত্রণালয়ের বর্তমান জনবল দিয়ে পরিচালনা করা সম্ভব, একটি পৃথক “জাতীয় সাহিত্য অধিদপ্তর” প্রতিষ্ঠাসহ ১৫ দফা দাবী বাস্তবায়ন করার জন্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকার কে এই পরামর্শ দেন সংগঠনের জাতীয় নেতৃবৃন্দ। জাতীয় সাহিত্য অধিদপ্তর বাস্তবায়ন পরিষদ কর্তৃক ইতিমধ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রীপরিষদ সচিব বরাবরে উল্লেখিত বিষয়াদি নিয়ে স্মারকলিপি দাখিল করিয়াছে বলিয়া সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয় । উক্ত দাবী গুলি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকাররের প্রতি জোরালো ভাবে আহবান জানান কবি-সাহিত্যিকগন।
সংগঠনের সিনিয়র সমন্বয়ক রওশন আরা রুশোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রধান সমন্বয়ক কাজী ছাব্বীর। মুখপাত্র নীলা মল্লিকের সঞ্চালনায়, সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসাইন, মাহমুদুল হাসান নিজামী, নাসিমা বানু করিম, ইভা আলমাস, প্রফেসর ডক্টর সন্দীপ মল্লিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ইকবাল হাসান স্বপন, রবিউল মাশরাফি, নজরুল বাঙালি। সমন্বয়কদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেসমিন দীপা, আব্দুল গনি ভূইয়া, নুরুল শিপার খাঁন, সাইফ সাদী, শরিফুল ইসলাম মুন্সী, আসমান আলী, শামীমা রুজী, বেলাল আহমদ, অসীম ভট্রচায্য, ইলোরা সোমা, সাজেদা ডুলু, নাসিমা ইসলাম,। সদস্যদের মধ্যে, মিলি হক, এডভোকেট সরদার আব্বাস উদ্দিন, আরিফুজাম্মান জুলহাসসহ কয়েকশত কবি-সাহিত্যিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় সাহিত্য অধিদপ্তর বাস্তবায়ন পরিষদ কর্তৃক উত্থাপিত দাবীসমূহের মধ্য রয়েছে- ১) বিদ্যমান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জনবল দিয়েই একটি পৃথক “জাতীয় সাহিত্য অধিদপ্তর” প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। “সাহিত্যকে সমাজ বদলের হাতিয়ার” হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে, সাহিত্য সেবায় সম্পৃক্তদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা। ২) সাহিত্য সেবায় সম্পৃক্ত সৃজনশীল ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে সাহিত্যচর্চার পরিবেশ বান্ধব একটি "সাহিত্য পল্লী" প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া সৃজনশীল সাহিত্যসেবীদের সাম্মানিক প্রদান ও সাহিত্য কর্ম সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ৩) শুদ্ধ উচ্চারণ এবং বাংলা বানান ও বর্ণমালা সহজীকরণে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহসহ সকল ভাষাবিজ্ঞানীদের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করা এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আবৃত্তি প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও সাহিত্য গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা এবং মানসিক পরিশুদ্ধির জন্য প্রতিটি সরকারী—বেসরকারী অফিসসমূহে ছোট পরিসরে হলেও পাঠাগারের ব্যবস্থা করা। ৪) দেশের প্রতিটি শহরে বহুতল ভবন, মার্কেট নির্মাণের নকশা অনুমোদনকালে বাধ্যতামূলকভাবে গণপাঠাগার / গণগ্রন্থাগারের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক ঘরের ব্যবস্থা করা। ৫) উদীয়মান লেখকদের সাহিত্য চর্চার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে নিয়মিত ‘লিট্ল ম্যাগাজিন’ প্রকাশের জন্য আর্থিক অনুদান প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করা। ৬) প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সাহিত্যকর্মে ঢাকায় আসা লেখকদের জন্য সাশ্রয়ীব্যয়ে, নিরাপদ রাত্রিযাপনে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় একটি “সাহিত্য ভবন” নির্মাণ করা। ৭) দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে কবিতা, ছড়া, গল্প, উপন্যাসসহ যাবতীয় বিষয় ভিত্তিক প্রকাশিত বইসমূহ যাচাই—বাছাই পূর্বক লেখকদেরকে সরকারিভাবে বাৎসরিক এককালীন অনুদানসহ সনদ প্রদান করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা। ৮) তালিকাভুক্ত লেখকদের সরকারি, বেসরকারি সকল হাসপাতালে বিনামূল্যে উন্নত চিকিৎসা পরিসেবা নিশ্চিত করা এবং তাদের সন্তানদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অবৈতনিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করা। ৯) সৃজনশীল বই প্রকাশে লেখকদের সহজ কিস্তিতে সুদবিহীন ঋণ প্রদান এবং জীবনাবসানের পর তালিকাভুক্ত লেখকদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করা। ১০) সৃজনশীল প্রকাশনার পাশাপাশি নিজস্ব বই প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে লেখকদের নামে একুশে গ্রন্থমেলায় স্টল বরাদ্দসহ, প্রতিটি জেলা, উপজেলায় বাৎসরিক বই মেলার আয়োজন করা। ১১) সাহিত্যসেবামূলক কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার স্বার্থে সাহিত্য বিষয়ক সভা, সমাবেশ, সেমিনারে অংশ গ্রহণে জেলা, উপজেলায় যাতায়াতে তালিকাভুক্ত লেখকদের জন্য সরকারিভাবে পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ১২) সাহিত্য সংগঠন সমূহের রেজিষ্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি সাহিত্য সংগঠন—এর বাৎসরিক অনুষ্ঠানগুলিতে সরকারিভাবে অনুদান প্রদান করা। ১৩) মাসিক কবিতা, ছড়া, গল্প, প্রবন্ধ, ও উপন্যাস প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ লেখক কবি, গীতিকার, সাহিত্যিক, নাট্যকার, ছড়াকার, গল্পকার প্রাবন্ধিক নির্বাচন করে সনদ প্রদানসহ আর্থিক অনুদানে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ১৪) বাংলাদেশের বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিজস্ব ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি লালনে দেশের আঞ্চলিক সাহিত্য এবং সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ১৫) সর্বোপরি উপরোল্লিখিত ন্যায্য দাবী দাওয়া পূরণের লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নামের সাথে ‘সাহিত্য’কে সংযোজন করে "সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়" হিসেবে নামকরণের মাধ্যমে সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর অধীনে পৃথক "জাতীয় সাহিত্য অধিদপ্তর" প্রতিষ্ঠা করার জন্য সরকারের কাছে জোরালো ভাবে আহবান জানান জাতীয় সাহিত্য অধিদপ্তর বাস্তবায়ন পরিষদ ।
বার্তা প্রেরক,
কাজী ছাব্বীর
প্রধান সমন্বয়ক
জাতীয় সাহিত্য অধিদপ্তর বাস্তবায়ন পরিষদ।