বৃহস্পতিবার, ০১ জুন, ২০২৩
14 Nov 2024 12:27 pm
৭১ভিশন ডেস্ক:- আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনের সময় বিকল্প সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। বিকল্প সরকারে কোন দায়িত্ব দিলে তা নিতে আপত্তি না থাকার কথাও তুলে ধরেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন।
জিএম কাদেরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে আপনাকে দেখতে চায়, দায়িত্ব পেলে কি গ্রহণ করবেন?
জবাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে যে কোনো ফরমেটে সরকার গঠন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে জাতীয় সরকারও হতে পারে। তবে দেখতে হবে সেখানে কারা আছে, তাদের দায়িত্ব কি।
‘আমাকে পছন্দ করে বলেই প্রধানের দায়িত্ব আমাকে অনেকে দেখতে চাইছে। কাজ করার সুযোগ থাকলে আমি তা গ্রহণও করতে পারি সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।’
জিএম কাদের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বা জাতীয় সরকার যে কোনো নামে নির্বাচনকালীন সরকার হতে পারে। প্রয়োজন হলে সংবিধান সংশোধনও করা যেতে পারে।
সাক্ষাৎকারে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচনি সরকার নিয়ে খোলামেলা মত দেন বিরোধীদলীয় উপনেতা।
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় যেতে সবাই জাতীয় পার্টিকে ব্যবহার করেছে। এবার আর সেটা হবে না। আমরা কারও ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবো না।’
৯০ এর দশকে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে জোট করেছে দলটি। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠন করতে জাতীয় পার্টির সহায়তা নেয় আওয়ামী লীগ। সেই নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছিলো ১৪৬ টি। জাতীয় পার্টি পায় ৩২টি এবং বিএনপির আসন ছিলো ১১৬ টি।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের দুই বছর আগে বিএনপি, জামাত এবং ইসলামী ঐক্যজোটের সাথে জোট গঠন করে এরশাদের জাতীয় পার্টি। ভোটের ঠিক আগ মুহুর্তে জোট ছেড়ে বেড়িয়ে যায় দলটি। তবে দল ভেঙে একটি অংশ বিজেপি নামে থেকে যায় সেই জোটের সাথে।
২০০৭ সালে জাসদ, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম ও এলডিপির সাথে জাতীয় পার্টিকেও জোটে নেয় আওয়ামী লীগ। অবশ্য এই জোট টেকেনি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে বাদ পড়ে এলডিপি ও গণফোরাম। সে সময় জোটে জাতীয় পার্টিই ছিলো আওয়ামী লীগের মুল শরিক।
সেই নির্বাচনে মহাজোটের কাছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট কোনো পাত্তাই পায় নি। নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে এই জোট।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালে আরেক দফা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেয়া আসনে ভোট করে জাতীয় পাটি। নির্বাচনের পর সংসদে প্রধান বিরোধীদল হিসেবেও মর্যাদা পায় দলটি। বিরোধী দলে থাকলেও দলটির বেশ কয়েকজন নেতা সেই সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এ নিয়ে সে সময় দলটিকে নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
এরপর বহুবার জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের জোট থেকে বের হয়ে যেতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত জোটে থেকে যায়। ২০১৮ সালেও আওয়ামী লীগের সাথে অনেকটা সমঝোতা করেই নির্বাচনে আসে তারা। এই নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হলে ২২ টি আসন নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের স্থান ধরে রাখে জাতীয় পার্টি।
২০১৯ সালে দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলটির চেয়ারম্যান হন তার ভাই জিএম কাদের।
বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলেও মত দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাদের। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে ভোট বর্জন এর সমাধান নয়।
‘এ সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, সব নিয়ন্ত্রন করেন একজন। দেশে এখন একনায়কতন্ত্র চলছে। বাকশাল কায়েম হয়েছে। সংসদ পুরোপুরি অকার্যকর।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বিকল্প সরকারে রাজনীতিবিদ ও সুশীল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে বলে মত তার। কাদের বলেন, ‘দেশে তত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন আজীবন আছে এমন মন্তব্য খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই করেছিলেন। তাই যারা বলে সংবিধান সংশোধন সম্ভব নয় সেই দাবি ভিত্তিহীন। ৯১-২০০৮ সংবিধানের বাইরে গিয়েই সরকার গঠন করা হয়েছিলো।’
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনি সরকারের মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানান জিএম কাদের। এসময় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিকে স্বাগত জানান তিনি। বলেন, ‘এই পদক্ষেপে দেশের রাজনীতিকে বিশুদ্ধ করবে।
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনক