সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩
15 Nov 2024 08:52 pm
বিএনপি-জামায়াত অশুভ শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে বারবার হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।
তিনি বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) এ দেশের স্বাধীনতা, উন্নয়ন-অগ্রগতি মেনে নিতে পারে না। তাই তারা এখন নির্বাচন নিয়ে খেলা শুরু করেছে। পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। যে সংবিধানের জন্য ৩০ লাখ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি হয়েছে, যে সংবিধানের জন্য জীবনবাজি রেখে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম সেই সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
সোমবার বেলা ১১টায় মেহেরপুরের মুজিবনগর শেখ হাসিনা মঞ্চে মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন হানিফ।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা ১৪ বছরে বাংলাদেশকে চরম দরিদ্র দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে নিয়ে এসেছি আমরা। আজ বাংলাদেশ সারাবিশ্বে প্রশংসিত। আমরা খাদ্য, বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু এখনো তারা বিরুদ্ধাচারণ করে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য, সরকারেকে ক্ষমতাচ্যুত করা, উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা।
তিনি বলেন, যাদের সক্ষমতা আছে তারা নির্বাচনে আসবেন। নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রমাণ করবেন জনগণ কাকে চায় বা কাকে চায় না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়ে জনগণ কার পক্ষে আছে সেটা বলার সুযোগ নেই।
হানিফ বলেন, বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ছিল যুগ যুগ ধরে, শত শত বছর ধরে। বাঙালি শত শত বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, বারবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। কিন্তু আমাদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। হাজী শরীয়তুল্লাহ ফরায়েজি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তির জন্য প্রথম লড়াই-সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। তিতুমীর বাঁশেরকেল্লা নির্মাণ করে বাঙালির মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন; কিন্তু ফল আসেনি। মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসহ অনেকেই লড়াই করেছেন; কিন্তু আমাদের মুক্তি আসেনি।
তিনি বলেন, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। বাঙালি রক্ত দিয়েছে, ৫৬ হাজার বর্গমাইল রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বহুবার; কিন্তু মুক্তি আসেনি। অবশেষে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, তোমরা ঐক্যবদ্ধ হও। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। আমরা জীবন দিয়ে হলেও বাংলাকে মুক্ত করবো। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠা করেছি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে হানিফ বলেন, স্বাধীনতা কারো দয়ায় আসেনি, কোনো গোলটেবিলে আলোচনায় বসে বা কোনো মেজরের হুইসেলে হয়নি। এই স্বাধীনতা অর্জনের বিশাল প্রেক্ষাপট আছে। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের পর বাঙালির ওপর পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রথমেই আমাদের মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন করেছিলেন। ’৫২র ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল মুক্তির যাত্রা। ‘৫৪-র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ‘৫৬-র শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ‘৬২ শিক্ষা আন্দোলন ও ’৬৬ ছয় দফার মধ্য দিয়ে আমরা ধাপে ধাপে এগিয়েছি। মূলত ‘৬৬-র ছয় দফাই ছিল আমাদের স্বাধীনতার মূল সোপান।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলার কৃষক, শ্রমিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দুর্বার সংগ্রাম করেছিলেন। বাঙালির মুক্তির জন্য আন্দোলন করায় জাতির পিতাকে বারবার পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠির রোষানলে পড়তে হয়েছিল। ছয় দফা ঘোষণার পর পাকিস্তানিরা বুঝতে পারলো বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর বিরদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দেয়া হলো। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে স্বাধীনতার পথ, মুক্তির পথ চিরতরে বন্ধ করে দেয়া। কিন্তু বাঙালি জাতির আন্দোলনের কারণে পাকিস্তানিরা তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হলো।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। মূলত এটাই ছিলো স্বাধীনতার ডাক, আহ্বান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাক-হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে অপারেশন সার্চলাইট নামে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। তাৎক্ষণিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর ইপিআরের ওয়ারলেসে সারা বাংলায় সে ঘোষণা ছড়িয়ে পড়লো। জনগণকে আগেই প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন এবার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমাদের জাতীয় নেতারা সেই সময়ে পাশ্ববর্তী বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ভারতে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেখানে ১০ এপ্রিল সরকার গঠন করলেন। সেই সরকারের আনুষ্ঠানিক শপথ এই ঐতিহাসিক আম্রকাননে হয়েছিলো। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, প্রয়াত নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে বাকিদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল। সেই সময়ে গার্ড অব অনার শেষে তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, আমরা যা করেছি আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে করেছি। সেটাই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার যাত্রা শুরু। এই সরকারের নেতৃত্বে যুদ্ধ করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি।
আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কারো অবদান রাখার সুযোগ নেই। বাংলার কৃষক শ্রমিক মুক্তিযুদ্ধ করেছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। এখানে আর কারো নির্দেশ বা নেতৃত্ব আসার সুযোগ ছিল না।
জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মাবরণে পাকিস্তানের এজেন্ট ছিলেন উল্লেখ করে হানিফ বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাস পাল্টানোর চেষ্টা করা হলো, বিকৃত করা হলো। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হলো। বঙ্গবন্ধুর অবদানকে খাটো করার চক্রান্ত হয়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে একে একে মুক্তিযোদ্ধাদের অপদস্থ করলেন। অসংখ্য রাজাকার দিয়ে সরকার গঠন করে প্রমাণ করেছিলেন জিয়া কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেনি। দালাল আইন বাতিল করে রাজাকার-যুদ্ধাপরাধী ও যারা গণহত্যা এবং অগ্নিসংযোগের নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের কারাগার থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন। কুখ্যাত রাজাকার প্রধান গোলাম আযমকে তিনি দেশে ফিরিয়ে এনেছেন। জামায়াতে ইসলামি-যাদের যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন।
বিএনপিকে আন্দোলন আন্দোলন খেলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, জনসমর্থনই আওয়ামী লীগের মূল শক্তি। এদেশের ক্ষমতার মালিক জনগণ। বিএনপি-জামায়াত দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল। এ দলের নেতৃত্বে লড়াই-সংগ্রাম করে স্বাধীনতা এসেছে। আওয়ামী লীগকে হুমকি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। রাজাকার-আলবদরদের আমরা একাত্তরে পরাজিত করেছি, আবারো পরাস্ত করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক।
বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন, পারভীন জামান কল্পনা, অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এম. এ খালেক।