রবিবার, ১২ মার্চ, ২০২৩
13 Nov 2024 09:07 pm
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ‘ভ্যানোত করি কোনো মালামাল নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্রিজত উঠলে খালি কইলজ্যা কাঁপে। কখন জানি ভ্যান সুদ্ধে ব্রিজ ভাঙ্গি ৫০ ফুট তলোত পরি। এ্যার আগেও কাঠ ভাঙিয়্যা ম্যালা কয়জন নিচত পড়ি গ্যাচিল। ব্রিজ হওয়ার কতা ম্যালাদিন আগ থাকি খালি শুনব্যার নাগছি। নতুন ব্রিজট্যা হলে ছোলপৈলগুল্যার স্কুলোত যাওয়াও এ্যাকনা ভালো হইলো হয়।’
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝার ইউনিয়নের নারায়ণপুর কিশামত বালুয়া গ্রামের ভ্যান চালক রহিম উদ্দিন ব্যাপারি (৪৮)। এই গ্রামের ঘাঘট নদীর ওপর প্রায় ৮ বছর আগে নির্মাণ করা হয় একটি কাঠের সেতু। এই সেতুটি দিয়ে খোলাহাটি, কুপতলা ও বল্লমঝাড় তিন ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার পথচারী চলাচল করেন। ২০০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি অত্যন্ত সরু।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় ৮ বছর আগে ঘাঘট নদীর ওপর এলাকাবাসীর উদ্যোগে বাঁশ এবং কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় সেতুটি। তখন থেকেই এই সেতুর ওপর দিয়ে তিন ইউনিয়নের মানুষ যাতায়াত করছেন। বিশেষ করে শহর ঘেষা চকমামরোজপুর, কুপতলার দুর্গাপুর, চাপাদহ, মোল্লাবাজার, বল্লমঝাড় ইউনিয়নের খোলাবাড়ি, জামেরতলসহ কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন এই পথে। এর আগে মানুষ প্রথমে নৌকা ও পরে বাঁশের সেতু তৈরি করে যাতায়াত করতেন। দুই বছর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগম গিনি সেতুটি সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেন এবং স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এখনো স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি।
দীর্ঘদিনেও নতুন ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুরাতন ও ঝুঁকিপূণ কাঠের সেতুটি পার হতে হয় সাবাইকে। সেতুটি এতোটাই নড়বড়ে যে যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে গেছে। বর্তমানে সেতুটির অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলেও জানান তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যে কোন সময় সেতুটি ভেঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অনেকেই কথা দেয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ব্রিজ নির্মাণ করা হয় না।’
নারায়ণপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সেতুটির অবস্থা খুবই খারাপ। স্কুলের কোমলমতি শিশুদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।’
বল্লমঝাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার রহমান বলেন, ‘সেতুটির দুই পাশে দুটি বিদ্যালয়ে রয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াত করেন। পাশেই ভেড়ামারা ব্রিজের কাজ চলছে। দুর্ভোগ লাঘবে কর্তৃপক্ষ দ্রুতই ব্যবস্থা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি। আমি নিজেও অনেকবার এই বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।’গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ সারোয়ার কবির বলেন, ‘কাঠের সেতুটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধিনে ব্রিজের ছবিসহ ইতোমধ্যে প্রকল্প কর্মকর্তার নিকট তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে চলতি অর্থবছরেই নতুন ব্রিজের কাজ শুরু শুরু হতে পারে।’
গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘কিশামত বালুয়ায় ঘাঘট নদীর কাঠের সেতুটির স্থানে ব্রিজ নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা রাখি দ্রুত সময়ে ওই স্থানে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’