সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৩
17 Nov 2024 01:57 am
বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার শেরপুরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ওপর হামলার সাথে জড়িতদের বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ। ১৫ই জানুয়ারি রবিবার দুপুরে বগুড়া প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন অভিযোগ করে বলেন, গত ০৮ জানুয়ারী ২০২৩ বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের সন্তোষ সিং এর পৈতৃক জমিসহ আম্বইল ও গৌড়তা মৌজার আদিবাসীদের ভোগ-দখলে থাকা খাসজমি স্থানীয় ভূমিদস্যু সলেমান মাস্টার, আছপ আলী, আরিফুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন (বাচ্চু), মহাব্বত, ফারুক, হানিফ, সবুজ, জুয়েল, নজু, স্বপন, কালাম, সালাম, সাঈদ, সাইফুল, জহুরুল, ফজলু, বিপুল হুজুর, দুলাল, বারিক, টুটুল ও আকুল প্রমুখের নেতৃত্বে জবর-দখলের উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়। এসময় আদিবাসী নারী, দিনমজুর, শ্রমজীবী, শিক্ষার্থীদের কেউই রেহাই পাননি। এ বিষয়ে আদালতে একাধিক মামলাও বিচারাধীন। গত সপ্তাহ জুড়ে আদিবাসীদের উপর দফায় দফায় হামলা চালিয়ে আদিবাসী নারী শিশু ও বৃদ্ধদের জখম করে। আদিবাসীদের মধ্যে চরমভাবে আহতরা হলেন সুজন সিং, সুখী রানী সিং, রিপন কুমার সিং, মিনা রানী সিং, জইসা সিং, বসন্ত সিং, শ্রীকান্ত মাহাতো, উজ্জ্বল সিং, সুজন সিং, আকাশ সিং, নাদু সিং, মালতী বালা, শংকরী বালা, সোহাগী বালা, সুশীল সিং প্রমুখ।
হামলাকারী ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীরা আদিবাসী নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধদের হত্যার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং বেধরক মারধর করে মরনাপন্ন অবস্থায় তাদের পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। থানায় জানানোর পর পুলিশ গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজ হাসপাতাল এবং শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। ১০ জানুয়ারী বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠক হয়। সমঝোতা বৈঠক থেকেই উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ১০ দিনের মধ্যেই সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং উভয়পক্ষকে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখবার আহ্বান জানায়।
কিন্তু তার পরদিনই ১১ জানুয়ারি সকালে পুনরায় আম্বইল বেলতলা মাদ্রাসা মসজিদের মোয়াজ্জিন খেজুর আলী, জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ৪টা মসজিদ থেকে ঘোষণা দিয়ে আক্রমণ করে সুজন সিং এবং উজ্জ্বল সিংকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয় পাহারারত পুলিশের উপস্থিতিতে। এরপর থানায় পুনরায় ফোন করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স এসে হামলাকারীদের সরিয়ে দেয়। আবারো আক্রান্তদের জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
এমনিতর পরিস্থিতিতে ১৪ জানুয়ারী ২০২৩ (শনিবার) জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কিমিটির নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে সরেজমিন পরিদর্শনে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে নেতৃবৃন্দ দেখতে ও জানতে পারেন যে, আহতগণ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও তাদের মাথার সেলাই এখনো রয়েছে। তারা চিকিৎসার প্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয় করতে, নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিসও ক্রয় করতে বাজারে যেতে পারছেন না, শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না, চাকরিজীবীগণ কর্মস্থলে যেতে পারছে না, দিনমজুরগণ কাজে যেতে পারছে না। ভয়াবহ রকম আতঙ্কের মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীগণ সেখানে এখনো মোটরসাইকেল, ইজিবাইক নিয়ে মোহড়া দেয় এবং হুমকী দিচ্ছে পুলিশ দিয়ে আর কতদিন পাহারা দিবে। এমতাবস্থায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে- ১. অবিলম্বে হামলাকারী অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচার কর। ২. অবিলম্বে আহতদের চিকিৎসা ব্যয়সহ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত কর। ৩. ভূক্তভোগী আদিবাসীদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের নিশ্চয়তা, জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত কর। ৪. সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমিকমিশন গঠন কর। এই ৪টি দাবি তুলে উক্ত ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছে আদিবাসী পরিষদের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নরেন চন্দ্র পাহান, মুখপাত্র ও দপ্তর সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)- নওগাঁ জেলা শাখার সমন্বয়ক জয়নাল আবেদীন মুকুল, দিনাজপুর জেলা শাখার আহবায়ক কিবরিয়া হোসেন, বগুড়া জেলা শাখার সদস্য সচিব দিলরুবা নুরী, ডাঃ ফিলিমন বাস্কে, সভাপতি সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, গাইবান্ধা। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ- বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি সন্তোষ সিং (বাবু), সাধারণ সম্পাদক স্বপন চন্দ্র কর্ণিদাস, সহ সাধারণ সম্পাদক শিপন রবিদাস প্রাণকৃষ্ণ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সুনীল রবিদাস বাবু প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে বক্তরা ১৮ই জানুয়ারি শেরপুর উপজেলা পরিষদ কার্যালয় ঘেরাও ও ২৪ জানুয়ারি বগুড়া সাতমাথায় প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
সুমন কুমার নিতাই